ক্রনিক রেস্পিরেটরী ডিজিজ | CRD | CCRD কারণ | লক্ষণ

ক্রনিক রেস্পিরেটরী ডিজিজ CRD । CCRD কারণ | লক্ষণ

মুরগির ক্রনিক রেস্পিরেটরী ডিজিজ (CRD) এবং কম্পলিকেটেড ক্রনিক রেস্পিরেটরী ডিজিজ (CCRD), যা মুরগির শ্বাসনালীতে ক্ষতি সাধন করে এবং ডিম এর উৎপাদন কমিয়ে দেয়। এই রোগগুলোর পেছনে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের যৌথ সংক্রমণ দায়ী ।

ক্রনিক রেস্পিরেটরী ডিজিজ (CRD)

সি আর ডি (CRD) রোগের কারণ

সি আর ডি (CRD) এককভাবে কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয় না। এর মূল কারণ হলো মাইকোপ্লাজমা (Mycoplasma gallisepticum) নামক ব্যাকটেরিয়া। তবে, এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের সাথে যখন ভাইরাস, টিকা কাজ না করা, ইমুনোসাপ্রেসিভ এজেন্ট এবং দূর্বল ব্যবস্থাপনা কাজ করে, তখন সি আর ডি (CRD) রোগটি হয়। এই ব্যাকটেরিয়া মূলত শ্বাসনালীতে আক্রমণ করে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের রূপ নেয়।

মাইকোপ্লাজমা একটি ইমোনোসাপ্রেসিভ রোগ, অর্থাৎ এটি মুরগির ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে দেয়। এর ফলে মুরগি অন্যান্য রোগের প্রতি আরও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। যখন ইমিউনিটি কমে যায়, তখন সি আর ডি (CRD) র জটিলতা বেড়ে যায় এবং এটি যেকোনো বয়সের মুরগি তে হতে পারে।

সি আর ডি (CRD) রোগের প্রধান কারণ

NH₃ (আমোনিয়া) প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয় যা মুরগির লিটারের মলমূত্রের সাথে আর্দ্রতার উপস্থিতিতে তৈরি হয়। এই গ্যাস মুরগির ট্রাকিয়াতে বিদ্যমান সিলিয়াকে ধ্বংস করে দেয়। সিলিয়া মূলত শ্বাসনালীর উপরিভাগে অবস্থিত চুলের মতো অংশ, যা ধুলিকণা এবং অন্যান্য কণাকে আটকে রাখে। যখন সিলিয়া ধ্বংস হয়ে যায়, তখন ট্রাকিয়ার আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এটি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। ফলে, এই রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

সি আর ডি (CRD) রোগের লক্ষণ

সি আর ডি (CRD) রোগে আক্রান্ত মুরগিদের মধ্যে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়।

১। শ্বাসকষ্ট এবং কাশিঃ মুরগি শ্বাসকষ্টে ভোগে এবং প্রায়ই কাশি দিতে দেখা যায়। এটি বিশেষত খাবার দেওয়ার সময় বেশি লক্ষ্য করা যায়।

২। নাক দিয়ে মিউকাসঃ মুরগির নাক দিয়ে মিউকাস বা তরল বের হতে পারে, যা রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে গণ্য হয়।

৩। চোখে ফেনাযুক্ত তরলঃ চোখে ফেনাযুক্ত তরল দেখা যায় এবং অনেক সময় চোখ ছোট হতে পারে।

৪। শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় শব্দঃ শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় মুরগির গলা থেকে ঘড় ঘড় শব্দ শোনা যায়। এই শব্দটি রাতের বেলায় আরও বেশি শোনা যায়।

৫। মুখ ও চোখ ফোলাঃ মুরগির মুখ ও চোখের পাতা ফুলতে পারে। অনেক সময় এটি করাইজারের মত মনে হতে পারে।

৬। ওজন ও ডিমের উৎপাদন কমে যায়ঃ মুরগির খাদ্য গ্রহণ কমে যায় এবং এর ফলে ওজন এবং ডিমের উৎপাদন কমে যায়।

৭। চোখ ও নাক দিয়ে পানি পড়াঃ মুরগির চোখ ও নাক দিয়ে পানি পড়তে দেখা যায় যা রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে গণ্য হয়।

৮। জয়েন্ট ফোলাঃ ক্রনিক পর্যায়ে গেলে মুরগির জয়েন্ট ফুলতে পারে এবং হাঁটতে সমস্যা হয়।

কম্পলিকেটেড ক্রনিক রেস্পিরেটরী ডিজিজ (CCRD)

সি সি আর ডি (CCRD) রোগের কারণ

সিসিআরডি (CCRD) আরও জটিলতায় রূপ নেয় যখন সাথে ই. কলাই (Escherichia coli) ব্যাকটেরিয়া যুক্ত হয়, তখন এটি সিসিআরডি বা কম্পলিকেটেড ক্রনিক রেস্পিরেটরী ডিজিজে পরিণত হয়। এর পাশাপাশি, মাইকোপ্লাজমা সংক্রমণের সাথে যদি অন্যান্য ভাইরাস যেমন, ইনফেকশিয়াস ব্রংকাইটিস (IB), রানিক্ষেত (Newcastle Disease), ইনফেকশিয়াস ল্যারিংগোট্রাকাইটিস (ILT), ফাউল কলেরা, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (AI), সালমোনেলা, স্টেফাইলোকক্কাস, এবং স্ট্রেপটোকক্কাস যুক্ত হয়, তখন এই রোগটি আরও জটিল রূপ নেয়।

মাইকোপ্লাজমা সংক্রমণ যদি ব্রিডার থেকে বাচ্চাতে চলে আসে, তখন সি আর ডি বেশি হয়। এটি মুরগির বাচ্চাদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের মধ্যে রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায়।

সি সি আর ডি (CCRD) রোগের লক্ষণ

সি সি আর ডি রোগে আক্রান্ত মুরগিদের মধ্যে সি আর ডি র সব লক্ষণ দেখা যায়, তবে এর সাথে আরও কিছু অতিরিক্ত জটিলতা যুক্ত হয়।

১। সাইনোসাইটিস ও কনজাংটিভাইটিসঃ এই রোগের কারণে মুরগির সাইনোসাইটিস (সাইনাসের প্রদাহ) এবং কনজাংটিভাইটিস (চোখের প্রদাহ) দেখা যায়। এতে মুরগির চোখ ও মুখের আশপাশের টিস্যুতে সংক্রমণ ঘটে এবং মুরগির মুখ ফুলে যায়।

২। মৃত্যুহারঃ সি সি আর ডি আক্রান্ত মুরগিদের মধ্যে মৃত্যু হার বেশি। মুরগি শুকিয়ে শুকিয়ে মারা যায়।

৩। এয়ারস্যাকুলাইটিসঃ ই. কলাই ট্রাকিয়াতে প্রবেশ করে এয়ারস্যাকুলাইটিস সৃষ্টি করে, যা শ্বাসনালীতে অতিরিক্ত জটিলতা তৈরি করে।

৪। জয়েন্টের সমস্যাঃ মাইকোপ্লাজমা সংক্রমণের কারণে মুরগির জয়েন্ট ফুলতে পারে এবং এতে মুরগির হাঁটতে সমস্যা হয়।

৫। শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যাঃ শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় মুরগির গলা থেকে ঘড়ঘড় শব্দ শোনা যায় যা রাতের বেলায় আরও বেশি হয়। মুরগি মুখ হা করে নিঃশ্বাস নেয় এবং অনেক সময় মুখ ও চোখের পাতা ফুলে যায়।

উপসংহার

মুরগির সি আর ডি (CRD) এবং সি সি আর ডি রোগগুলি মুরগির ডিম উৎপাদনে বড় প্রভাব ফেলে। এগুলো মুরগির শ্বাসতন্ত্রকে আক্রমণ করে এবং তাদের স্বাস্থ্যে জটিলতা তৈরি করে। তাই এই রোগগুলির প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। সঠিকভাবে রোগের লক্ষণগুলো নির্ণয় করে দ্রুত চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে মুরগির উৎপাদনশীলতা বজায় রাখা সম্ভব।

References

1. David ES., Martine B., Catherine ML., Larry R., Venugopal N., and David LS. Diseases of Poultry. Wiley-Blackwell, (2020).
2. Chauhan HVS., and Roy S. Poultry Diseases Diagnosis and Treatment. New Age International Publishers, (2018).
3. Vegad JL. Poultry Diseases; A Guide For Farmers And Enlarged Professionals. CBS Publishers & Distributors, (2018).
4. Boulianne M., Barger K., Dorko N., French JD., et. al. Avian Disease Manual. American Association of Avian Pathologists, Inc., (2019).
5. Several journals, articles, review articles, and internet resources.

পোস্টটি শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করেনি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি পোল্ট্রি ল্যাবের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url