মুরগির বয়স অনুযায়ী রোগসমূহ

মুরগির বয়স অনুযায়ী রোগসমূহ

মুরগির বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি এবং সেগুলির প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে মুরগির বয়স অনুযায়ী সাধারণত কোন কোন রোগ হতে পারে তা উল্লেখ করা হলোঃ

১ম সপ্তাহে মুরগির রোগসমূহ

অম্ফালাইটিস (Navel Infection)

লক্ষণ: বাচ্চা মুরগির নাভির অংশ ফোলা, লালচে বা পুঁজযুক্ত হতে পারে। এটি তাদের দুর্বল ও অসুস্থ করে তোলে। কারণ: নাভি সঠিকভাবে শুকাতে না পারা বা সংক্রমণ হওয়া।

ব্রুডার নিউমোনিয়া (Brooder Pneumonia)

লক্ষণ: শ্বাসকষ্ট, নাক দিয়ে সর্দি পড়া এবং কাশি হয়। মুরগির ক্ষুধা কমে যায় এবং ওজন কমে। কারণ: ঠান্ডা আবহাওয়া, বায়ুর চলাচল কম, এবং উচ্চ আর্দ্রতা।

ই. কলাই (E. Coli Infection)

লক্ষণ: ডায়রিয়া, শরীরের বৃদ্ধি বন্ধ হওয়া এবং মুরগি দুর্বল হয়ে যাওয়া। কারণ: পরিবেশের দূষণ বা খাওয়ার মাধ্যমে ছড়ায়।

পুলোরাম ডিজিজ (Pullorum Disease)

লক্ষণ: ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, দুর্বলতা। মুরগির মৃত্যুহার বেশি হয়। কারণ: সালমোনেলা পুলোরাম নামক ব্যাকটেরিয়া।

১ম সপ্তাহের বিশেষ ব্যবস্থাপনা

  • আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: প্রথম সপ্তাহে মুরগির তাপমাত্রা ৩৩-৩৫0C রাখা উচিৎ। আর্দ্রতা প্রায় ৬০-৭০% রাখা।
  • ভিটামিনের সরবরাহ: বিশেষ করে ভিটামিন A, D, এবং E প্রদান করা যাতে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

২য় সপ্তাহে মুরগির রোগসমূহ

সালমোনেলোসিস (Salmonellosis)

লক্ষণ: ডায়রিয়া, হজমের সমস্যা, এবং মুরগির দুর্বলতা। কারণ: খাদ্য, পানি, বা সংক্রমিত সরঞ্জামের মাধ্যমে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া ছড়ায়।

এভিয়ান এনসেফালোমাইলাটিস (Avian Encephalomyelitis)

লক্ষণ: শরীরের কম্পন, দুর্বলতা, এবং স্থিরতা। মুরগির স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলে। কারণ: ভাইরাসের সংক্রমণ।

কলিব্যাসিলোসিস (Colibacillosis)

লক্ষণ: শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, এবং ওজন হ্রাস। কারণ: ই. কলাই ব্যাকটেরিয়া।

ভিটামিনের ঘাটতিজনিত রোগ

স্টার গ্রেজিং (Star grazing) (Vitamin B1 Deficiency): স্নায়ুর সমস্যা ও আচরণগত পরিবর্তন। 

কার্ল্ড টো প্যারালাইসিস (Curled toe paralysis) (Vitamin B2 Deficiency): পায়ের আঙ্গুল বাঁকা হয়ে যাওয়া এবং চলাফেরায় অসুবিধা। 

ভিটামিন A এর ঘাটতি: রেটিনা ও মিউকাস মেমব্রেনের সমস্যা, যা অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।

ভিটামিন E এর ঘাটতি (Encephalomalacia): মস্তিষ্কের ক্ষতি, যা মুরগির স্থিরতা ও চলাচলের সমস্যা সৃষ্টি করে।

৩য়-৪র্থ সপ্তাহে মুরগির রোগসমূহ

চিকেন ইনফেকশাস এনিমিয়া (Chicken Infectious Anemia, CIA)

লক্ষণ: রক্তস্বল্পতা, ফ্যাকাশে চামড়া, এবং ইমিউন সিস্টেম দুর্বল। কারণ: CIA ভাইরাস সংক্রমণ।

ইনফেকশাস বারসাল ডিজিজ (Infectious Bursal Disease, IBD)

লক্ষণ: ডায়রিয়া, এবং মুরগির ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যাওয়া। কারণ: Infectious Bursal Disease ভাইরাস সংক্রমণ।

এসাইটিস (Ascites)

লক্ষণ: পেটের মধ্যে পানি জমা হওয়া, শ্বাসকষ্ট। কারণ: উচ্চ তাপমাত্রা, খাদ্যে অতিরিক্ত লবণ, এবং অক্সিজেনের ঘাটতি।

সাডেন ডেথ সিন্ড্রোম (Sudden Death Syndrom): মুরগির আচমকা মৃত্যু হয়, যা সাধারণত হৃদরোগের কারণে হয়ে থাকে।

নেক্রোটিক এন্টারাইটিস (Necrotic Enteritis, NE)

লক্ষণ: ডায়রিয়া, অন্ত্রের প্রদাহ, এবং ওজন কমে যাওয়া। কারণ: ক্লস্ট্রিডিয়াম পেরফ্রিঞ্জেনস ব্যাকটেরিয়া।

৪র্থ-৫ম সপ্তাহে মুরগির রোগসমূহ

নিউক্যাসল ডিজিজ / রানীক্ষেত (Newcastle Disease, ND)

লক্ষণ: শ্বাসকষ্ট, স্নায়ুর সমস্যা, এবং ডিম উৎপাদন কমে যাওয়া। কারণ: ND ভাইরাস সংক্রমণ।

মাইকোপ্লাজমোসিস (Mycoplasmosis, CRD/CCRD)

লক্ষণ: শ্বাসকষ্ট, খাওয়া কমে যাওয়া, এবং ডিম উৎপাদন কমে যাওয়া। কারণ: মাইকোপ্লাজমা ব্যাকটেরিয়া।

কক্সিডিওসিস (Coccidiosis)

লক্ষণ: ডায়রিয়া, রক্তক্ষরণ, এবং ওজন কমে যাওয়া। কারণ: কক্সিডিয়া প্রোটোজোয়া।

মাইকো-টক্সিকোসিস (Mycotoxicosis)

লক্ষণ: লিভার, কিডনি, এবং স্নায়ুর ক্ষতি। ডিম উৎপাদন কমে যায়। কারণ: ছত্রাকের বিষাক্ত পদার্থ (টক্সিন)।

৬-১৫ সপ্তাহে মুরগির রোগসমূহ

  • নেক্রোটিক এন্টারাইটিস (NE): অন্ত্রের প্রদাহ যা মুরগির পুষ্টির ঘাটতি ও অসুস্থতা সৃষ্টি করে।
  • স্টেফাইলোকক্কাস সংক্রমণ (Staphylococcus Infection): পায়ের জয়েন্টের সংক্রমণ এবং চামড়ার ক্ষতি।
  • আই এল টি (Infectious Laryngotracheitis, ILT): শ্বাসনালী ও ট্র্যাকিয়ার প্রদাহ, যা শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে।
  • ফাউল পক্স (Fowl Pox): মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং চামড়ায় ক্ষত সৃষ্টি করে।

১৬ সপ্তাহ থেকে পরবর্তী সময়ের রোগসমূহ

  • লিউকোসিস: রক্তের ক্যান্সার যা ১৬ সপ্তাহের পর হয়।
  • এগ ড্রপ সিনড্রোম (EDS): ডিম উৎপাদন কমে যায়।
  • মেরেক্স ডিজিজ (Marek's Disease): স্নায়ু এবং অঙ্গগুলোতে টিউমার সৃষ্টি করে।
  • প্যারাটাইফয়েড: সালমোনেলার কারণে হয়।
  • হিট স্টোক (Heat stoke): তাপমাত্রার কারণে মুরগির স্ট্রোক হতে পারে।
  • ফ্যাটি লিভার (Fatty liver): লিভার এ অতিরিক্ত চর্বি জমে।
  • এগ পেরিটোনাইটিস: ডিমের অম্লিক অংশ পেটের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

গ্রোয়িং পিরিয়ডে আমাশয়, ই. কলাই, এন্টারাইটিস, রানিক্ষেত, গাম্বোর, কৃমি, আই বি এইচ (IBH), চিকেন ইনফেকশাস এনিমিয়া, গাউট বেশি হয়।

পিক প্রডাকশনে ফাউল টাইফয়েড, ফাউল কলেরা, হিট স্টোক, ফাউল করাইজা, এইচ ৫ এন ১/এইচ ৯ এন ২ (H5N1/H9N2), ই ডি এস (EDS), লিউকোসিস, আই বি (IB) বেশি হয়।

যে কোনো সময় মুরগির যে সব রোগ হতে পারে

  1. মাইকোপ্লাজমোসিস (Mycoplasmosis)
  2. আই বি (Infectious Bronchitis)
  3. রানিক্ষেত
  4. সালমোনেলোসিস
  5. ফাউল পক্স
  6. ই. কলাই
  7. এ. আই (Avian Influenza)
  8. মাইকোটক্সিকোসিস

References

1. David ES., Martine B., Catherine ML., Larry R., Venugopal N., and David LS. Diseases of Poultry. Wiley-Blackwell, (2020).
2. Chauhan HVS., and Roy S. Poultry Diseases Diagnosis and Treatment. New Age International Publishers, (2018).
3. Vegad JL. Poultry Diseases; A Guide For Farmers And Enlarged Professionals. CBS Publishers & Distributors, (2018).
4. Boulianne M., Barger K., Dorko N., French JD., et. al. Avian Disease Manual. American Association of Avian Pathologists, Inc., (2019).

পোস্টটি শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করেনি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি পোল্ট্রি ল্যাবের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url