রানীক্ষেত | Ranikhet | রোগের কারণ ও স্ট্রেইন | Newcastle Disease
রানীক্ষেত রোগটি বাংলাদেশের অন্যতম মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাসটি হলো এভিয়ান প্যারামিক্সোভাইরাস টাইপ-১ (Avian Paramyxovirus type-1), এটি Paramyxoviridae পরিবারভুক্ত ভাইরাস। এটি হঠাৎ দেখা যাই এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যা ৬ থেকে ৭ দিনের মুরগি থেকে শুরু হয়ে ৭২ সপ্তাহ পর্যন্ত দেখা যায়। এই রোগটি বছরের যেকোনো সময়ে হতে পারে।
রানীক্ষেত রোগের কারণ
রানীক্ষেত রোগের কারণ হলো এভিয়ান প্যারামিক্সোভাইরাস টাইপ-১ (APMV-1), যা বিভিন্ন প্যাথোজেনিসিটির (pathogenicity) উপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন স্ট্রেইনে বিভক্ত। প্রতিটি স্ট্রেইনের রোগ সৃষ্টির ক্ষমতা আলাদা। স্ট্রেইনগুলিকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা হয়ঃ ভেলোজেনিক, মেসোজেনিক, লেন্টোজেনিক, এবং এসিম্পটোম্যাটিক। রানীক্ষেত রোগের লক্ষণগুলো ভাইরাসের ধরন এবং সংক্রমণের তীব্রতার উপর নির্ভর করে। রানীক্ষেত রোগের লক্ষণগুলো জানতে এই পোস্টটি পড়ুনঃ রানীক্ষেত | Ranikhet | রোগের লক্ষণ | Newcastle Disease
লেন্টোজেনিক স্ট্রেইন (Lentogenic strain)
লেন্টোজেনিক স্ট্রেইন হল রানীক্ষেত ভাইরাসের মৃদু ধরনের স্ট্রেইন। এটি সাধারণত মুরগির দেহে মৃদু শ্বাসকষ্টের সমস্যা সৃষ্টি করে এবং প্রধানত মুরগির বাচ্চাতে হয়।
লক্ষণসমূহঃ মৃদু শ্বাসনালীয় সমস্যা, গড়গড় শব্দ। মৃত্যুহারঃ ০-৫%। বয়স্ক মুরগিতে এই স্ট্রেইন খুব বেশি ক্ষতিকর নয়।
লেন্টোজেনিক স্ট্রেইনের উদাহরণঃ LaSota strain, B1 strain, F strain, V strain
রানীক্ষেত রোগের প্রতিরোধে ভ্যাকসিন একটি অত্যন্ত কার্যকরী পদ্ধতি। সাধারণত লেন্টোজেনিক স্ট্রেইন থেকে ভ্যাকসিন তৈরি করা হয় কারণ এই স্ট্রেইন মৃদু এবং মুরগির দেহে রোগ সৃষ্টির ঝুঁকি কম। ভ্যাকসিন দেওয়ার পর নিয়মিত টাইটার মনিটরিং করা জরুরি, যাতে মুরগির দেহে পর্যাপ্ত এন্টিবডি রয়েছে কিনা তা জানা যায়।
মেসোজেনিক স্ট্রেইন (Mesogenic strain)
মেসোজেনিক স্ট্রেইন মাঝারি মাত্রার রোগ সৃষ্টি করে। এটি ভেলোজেনিক স্ট্রেইনের তুলনায় কম ক্ষতিকর, তবে লক্ষণগুলো মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার হতে পারে।
লক্ষণসমূহঃ শ্বাসকষ্ট, গড়গড় শব্দ, স্নায়বিক সমস্যা, প্যারালাইসিস, এবং ডিম উৎপাদন কমে যাওয়া। মৃত্যুহারঃ সাধারণত ১০-৩০% (বাচ্চাতে ৫০% পর্যন্ত হতে পারে)।
উদাহরণঃ Komarov strain, R2B strain, Roakin starin, Mukteswar starin, H strain
ভেলোজেনিক স্ট্রেইন (Velogenic strain)
ভেলোজেনিক স্ট্রেইন হল রানীক্ষেত ভাইরাসের সবচেয়ে তীব্র এবং ক্ষতিকর স্ট্রেইন। এটি হঠাৎ এবং দ্রুতগতিতে মৃত্যু ঘটায় এবং তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না তবে পোস্টমর্টেম সাইন দেখে রোগ নির্ণয় করা যাই। রানীক্ষেত রোগের পোস্টমর্টেম সাইন গুলো জানতে এই পোস্টটি পড়ুনঃ রানীক্ষেত | Ranikhet | পোস্টমর্টেম সাইন | Newcastle Disease
লক্ষণসমূহঃ শ্বাসকষ্ট, দূর্বলতা, চোখের চারপাশ ও মাথা ফোলা, সবুজ পায়খানা, নার্ভাস লক্ষণ (যেমনঃ Tremor, Torticolis), পা ও ডানার প্যারালাইসিস, মৃত্যুর আগে Opisthotonos। মৃত্যুহারঃ ১০০% পর্যন্ত হতে পারে।
উদাহরণঃ Milano strain, Herts strain
এসিম্পটোম্যাটিক স্ট্রেইন (Asymptomatic strain)
এসিম্পটোম্যাটিক স্ট্রেইনের ক্ষেত্রে মুরগির দেহে কোনো দৃশ্যমান লক্ষণ দেখা যায় না। এই ধরনের সংক্রমণ সাধারণত শ্বাসযন্ত্রে সীমাবদ্ধ থাকে এবং ডিম উৎপাদনে সামান্য হ্রাস ঘটাতে পারে, তবে মৃত্যুহার প্রায় নেই।
পরিবেশ ও শীতকালীন প্রভাব
শীতকালে পর্দা দেওয়ার ফলে শেডের ভিতরে এমোনিয়া এবং কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস বেড়ে যায়, যার কারণে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাপমাত্রা অপ্রত্যাশিতভাবে উঠানামা করলে মুরগির শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রানীক্ষেত সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
রানীক্ষেত রোগের ভাইরাস ধ্বংস করার উপায়
রানীক্ষেত ভাইরাস সাধারণত উচ্চ pH (ক্ষার) পরিবেশে সহজেই ধ্বংস হয়। এই কারণে ফার্মে চুন (ক্ষার) দেওয়া হয় যাতে ভাইরাসকে প্রতিরোধ করা যায়। তবে ভেলোজেনিক নিউক্যাসল ডিজিজ ভাইরাস (VVND) pH এবং তাপমাত্রার প্রতি রেজিস্ট্যান্ট।
১। পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট (Potassium Permanganate)ঃ ঘনত্ব: ১:৫০০। পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট পানিতে মিশিয়ে জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
২। ইথানল (Ethanol)ঃ ৭০-৮০% ইথানল খুব দ্রুত রানীক্ষেত ভাইরাস ধ্বংস করে।
৩। ৪% ফর্মালিন (Formalin)ঃ ফর্মালিন একটি শক্তিশালী জীবাণুনাশক, যা রানীক্ষেত ভাইরাস ধ্বংস করতে অত্যন্ত কার্যকর। এটি সাধারণত ফিউমিগেশনে ব্যবহৃত হয়।
৪। ফিউমিগেশনঃ ফিউমিগেশন প্রক্রিয়ায় পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট এবং ফর্মালিন মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। প্রতি ১০০ ঘনফুট জায়গার জন্য ৩৫ গ্রাম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট এবং ৭০ মিলি লিটার ফর্মালিন মেশানো হয়।
উপসংহার
রানীক্ষেত রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। ভাইরাসের হেমাগ্লুটিনেশন (hemagglutination) ক্ষমতা এবং ইন্ট্রাসেরিব্রাল প্যাথোজেনিসিটি ইনডেক্স (ICPI) দ্বারা ভাইরাসের ধরন নির্ধারণ করা যায়। ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য পিসিআর (PCR) টেস্ট করা হয়।
বিডি পোল্ট্রি ল্যাবের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url