রানীক্ষেত | Ranikhet | রোগের লক্ষণ | Newcastle Disease
রানীক্ষেত রোগ, যা নিউক্যাসল রোগ নামেও পরিচিত, একটি ভাইরাসজনিত রোগ। রানীক্ষেত রোগের কারণ এভিয়ান প্যারামিক্সোভাইরাস টাইপ-১ (APMV-1), যা প্রধানত চারটি স্ট্রেইনে ভাগ করা হয়ঃ ভেলোজেনিক, মেসোজেনিক, লেন্টোজেনিক, এবং এসিম্পটোম্যাটিক। রানীক্ষেত রোগের কারণ গুলো জানতে এই পোস্টটি পড়ুনঃ রানীক্ষেত | Ranikhet | রোগের কারণ ও স্ট্রেইন | Newcastle Disease
১। পায়খানার ধরন ও জ্বর
রানীক্ষেত রোগে আক্রান্ত মুরগির পায়খানার রঙ পরিবর্তিত হয়। রানীক্ষেতে আক্রান্ত মুরগির পায়খানা সাধারণত চুনের মতো পাতলা হয়, তবে অনেক সময় সাদা, সবুজ এবং হলুদ মিশ্রিত হয়। পায়খানার মাঝখানে সবুজ এবং বাহিরের দিকে সাদা বর্ণ দেখা যায়। রোগে আক্রান্ত মুরগির শরীরে জ্বর থাকে, যা তাদের খাবার খাওয়ার ইচ্ছা কমিয়ে দেয়। তবে পিত্তথলি থেকে সিক্রেশন স্বাভাবিক থাকে বলে পায়খানা সবুজ হয়ে যায়। একইসঙ্গে, জ্বরের কারণে শরীর থেকে ক্যালসিয়াম শোষণ কম হয় এবং শরীর থেকে ক্যালসিয়াম বের হয়ে যায়, যা পায়খানায় সাদা অংশ তৈরি করে। অনেক সময় মলদ্বারের আশেপাশে পায়খানা লেগে থাকে, যা পরিষ্কার না করলে সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২। মুখমণ্ডল ফোলা ও চোখের সমস্যা
মুরগির চোখের চারপাশের টিস্যু ফুলে যায়। চোখে চেটচেটে স্রাব হতে পারে এবং চোখ আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে থাকতে পারে। মুরগির মুখমণ্ডল ফোলা অবস্থায় দেখা যায়। মুরগির নাক দিয়ে তরল স্রাব বের হতে থাকে এবং চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে। এই স্রাবের কারণে মুরগির চোখে এবং নাকে অস্বস্তি সৃষ্টি হয় এবং তারা শ্বাস নিতে কষ্ট পায়।
৩। শ্বাসকষ্ট, হাঁ করে শ্বাস নেওয়া ও মুখ দিয়ে লালা পড়া
রানীক্ষেত রোগে আক্রান্ত মুরগির শ্বাসকষ্ট একটি প্রধান লক্ষণ। মুরগি সাধারণত মুখ খুলে নিঃশ্বাস নিতে থাকে এবং মুখ দিয়ে লালা পড়ে। আক্রান্ত মুরগি হাঁ করে নিঃশ্বাস নেয় এবং ঘরের এক কোণে বসে থাকে, বিশেষত যদি লিটারে রাখা হয়। এ ধরনের শ্বাসকষ্টের সাথে কক কক শব্দ করা বা কাশি দেয়ার মতো লক্ষণও দেখা যেতে পারে। মৃদু আক্রমণের ক্ষেত্রে বারবার চিকিৎসা দেওয়ার পরও ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না।
৪। মাথা এবং ঘাড়ের অস্বাভাবিক মোচড়
রানীক্ষেত রোগের সবচেয়ে গুরুতর লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি হলো মস্তিষ্ক ও স্নায়বিক সমস্যা। ভাইরাস মস্তিষ্কের কোষগুলোকে আক্রমণ করলে মুরগির আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। এ সময় মুরগির ঘাড়, মাথা, এবং পুরো শরীর কাঁপতে থাকে। আক্রান্ত মুরগি ঘাড় ও মাথা সাপের মতো মোচড়াতে থাকে। কখনও কখনও মাথা পিছনের দিকে ঘুরে যায়।
৫। পা এবং ডানার প্যারালাইসিস এবং খিঁচুনি
রানীক্ষেত রোগে আক্রান্ত মুরগির পা ধীরে ধীরে অবশ হয়ে যায়। মুরগি হাঁটতে পারবে না এবং মাটিতে শুয়ে পড়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে পা এবং ডানার প্যারালাইসিস দেখা দিতে পারে। মুরগি পা এবং ডানা ঠিকমত নাড়াতে পারে না, ফলে তারা মাটিতে শুয়ে পড়ে এবং সাধারণত সেখান থেকে উঠতে পারেনা। আক্রান্ত মুরগি মাঝে মাঝে কক কক শব্দ করে এবং তারপর হঠাৎ করে লাফিয়ে ওঠে। আক্রান্ত মুরগিতে বারবার খিঁচুনি দেখা দেয় এবং এটি স্নায়বিক সমস্যার কারণে ঘটে।
৬। হঠাৎ মৃত্যু, অবসাদ এবং দুর্বলতা
আক্রান্ত মুরগি দ্রুত দুর্বল হয়ে নিস্তেজ হয়ে যায় এবং মাটিতে শুয়ে থাকে। তাদের সাধারণ চলাফেরায় কষ্ট হয়, তারা চলাফেরা করতে অনীহা প্রকাশ করে। রানীক্ষেত রোগে সবচেয়ে ক্ষতিকর ভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রথম লক্ষণই হতে পারে হঠাৎ মৃত্যু। এটি হঠাৎ এবং দ্রুতগতিতে মৃত্যু ঘটায় এবং তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না তবে পোস্টমর্টেম সাইন দেখে রোগ নির্ণয় করা যাই। রানীক্ষেত রোগের পোস্টমর্টেম সাইন গুলো জানতে এই পোস্ট টি পড়ুনঃ রানীক্ষেত | Ranikhet | পোস্টমর্টেম সাইন | Newcastle Disease
৭। ডিম উৎপাদনের হ্রাস এবং খোসা পাতলা ডিম
রানীক্ষেত রোগে আক্রান্ত লেয়ার মুরগির ডিম পাড়া উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। আক্রান্ত মুরগি সাধারণত খোসা পাতলা, নরম বা খসখসে ডিম পাড়ে। ডিমের মান খুবই খারাপ হয়ে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে ডিমের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
উপসংহার
রানীক্ষেত রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। ভাইরাসের হেমাগ্লুটিনেশন (hemagglutination) ক্ষমতা এবং ইন্ট্রাসেরিব্রাল প্যাথোজেনিসিটি ইনডেক্স (ICPI) দ্বারা ভাইরাসের ধরন নির্ধারণ করা যায়। ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য পিসিআর (PCR) টেস্ট করা হয়।
বিডি পোল্ট্রি ল্যাবের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url